রবি মৌসুমে বোরো ফসল উৎপাদনে সেচ একটি অন্যতম বিষয়। আর এই সেচ প্রদানের জন্য ডিজেল বা বিদ্যুৎ ব্যবহারে বোরো উৎপাদন খরচ অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়।  ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কমাতে বিকল্প পদ্ধতি সোলার সেচ পাম্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা অনেক বেশি জনপ্রিয় এখন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকের কাছে। সময়ের বিবর্তনে আধুনিক হয়েছে সবকিছু। পাশাপাশি আধুনিক হয়েছে ফসল উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যবহার বেড়েছে সোলার সেচ পাম্পের।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে মাঠে বোরো ধান আবাদে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়েছে। ভালো ফলন পেতে জমি পরিচর্যায় ভোর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কৃষক। আগাছা তোলা, সার কিটনাষক প্রয়োগ ও সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে কৃষক বোরো ধান উৎপাদনে। অপরদিকে বাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিসহ জমিতে সার ও কিটনাষক প্রয়োগে উৎপাদন ব্যয় কমাতে এখন সোলারে সেচ সুবিধায় অকেটাই স্বস্তি মিলেছে কৃষকের। বাড়তি খরচ বা ঝামেলা না থাকায় সোলারের দিকে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ডিজেল চালিত মেশিনে একবিঘা জমির ধান উৎপাদনে সেচ নিতে চার হাজার টাকা খরচ হলেও সোলারে ব্যয় কমেছে অর্ধেকে।

ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কের আশপাশের জমিতে সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে দেখা গেছে কৃষকদের। ভোগান্তি নিরসনের পাশাপাশি মাত্র দু হাজার টাকায় ইচ্ছেমত সেচ সুবিধাসহ মাঠ থেকে মেশিন চুরির ভয় কেটেছে কৃষকের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে ১শত ৪১ টি সোলার সেচ পাম্পের সুবিধা নিচ্ছেন কৃষকরা।

সোলার পাম্প এর সুবিধা নেওয়া কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা সোলারের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছি। এতে আমাদের বেরো উৎপাদন খরচ অনেক কমে গিয়েছে। বর্তমানে ১ বিঘা জমিতে সোলার পাম্প দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে ২ হাজার টাকা। আবার এই টাকা পরিশোধ করতে হবে ধান কেটে বিক্রয় করার পরে।

আরেক কৃষক রমজান আলী বলেন, বর্তমানে সব কছিুর দাম বেশি। সার, বিষ, ডিজেল, দৈনিক হাজিরা সব কিছু বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো আবাদ এর ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এতে পরে ধান বিক্রয় করে আমরা কৃষকরা লাভবান হতে পারি না। আর এই সোলার এর মাধ্যমে সেচ দেওয়ায় খরচ অনেকটা কমে আশে। এর কারণে কিছুটা হলেও লাভবান হওয়া সম্ভব।

সোলার পাম্প তৈরি ও ভাড়া দেন কৃষক সোলেয়মান আলী। তিনি বলেন, সোলারের কারণে বর্তমানে অল্প খরচে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে। শ্যালো মেশিনে তেল, মেশিন চুরি, নষ্টের ভয় ছিল ও শব্দ দূষন হত। সোলারের কারণে এখন আর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমি কৃষকের উন্নয়নে নিয়মিত চিন্তা করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমার ১৩ টি সোলার পাম্প দিয়ে বোরো সেচ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমি এই সোলার এর পরিধি আরো বাড়াতে চাই। এছাড়াও আমার কাছ থেকে অনেকে সোলার পাম্প ক্রয় করে নিয়ে যায়। মাত্র দেড় লাখ টাকায় একটি সোলার পাম্প দিয়ে সুন্দর সেচ দেওয়া সম্ভব। সরকার সহায়তা করলে আমি কৃষককে সোলার পাম্প দিয়ে আরো সহযোগীতা করতে পারবো।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, বাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে জেলার প্রায় সাত হাজার কৃষক এখন সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিচ্ছেন। সোলার পাম্পের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে ডিজেল ও বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা কমছে। সেই সাথে তাদের উৎপাদন খরচ কমে আসছে। যার ফলে বোরো ধান বিক্রি করে লাভবান হবেন এই জেলার কৃষকেরা।

 

 

কলমকথা/ বিথী